Skip to main content

শিশুর পেট ব্যথায় কী করবেন



শিশু পেটে ব্যথার কথা বললেই মা-বাবা মনে করে সে পড়া ফাঁকি দিতে এমন অজুহাত দিচ্ছে। প্রথমে অভিভাবকরা বিষয়টা আমলে নিতে চান না। পরে শিশুটি যখন বার বার একই কথা বলে বা কান্না করে তখন মা-বাবা চিন্তায় পড়ে যান।

অনেক সময় ছোট্ট শিশুর কান্না যেন থামতেই চায় না, বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।

চিকিৎসকের মতে, শিশুর পেট ব্যথা একটি অতি সাধারণ সমস্যা। সামান্য কারণেও পেটে ব্যথা হতে পারে আবার শরীরের বিশেষ কোনো অঙ্গের অসুবিধার কারণেও ব্যথা হতে পারে। সাধারণত শিশুর পেটে গ্যাস, খাওয়ার ভুল পদ্ধতি, বদহজমের কারণে পেট ব্যথা হয়।

এ ছাড়া নানান কারণে পেট ব্যথা হতে পারে যেমন : খাদ্যে বিষক্রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর সংক্রমণ ইত্যাদি।

পেট ব্যথায় শিশুর কান্না দেখে ভয়ে দ্রুত চিকিৎসকের বাড়ি গিয়ে অতি পাওয়ারের এন্টিবায়েটিক না খাইয়ে বরং বাড়িতেই আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিকার পেতে পারেন!

এখন ভাবছেন কীভাবে সম্ভব, শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে তো হেলাফেলা নয়। আরে খোদ বিশেষজ্ঞরাই আপনাদের শিশুদের কথা চিন্তা করে কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রতিকার দিয়েছেন। এগুলো সহজলভ্য ও আপনার শিশুকে আরাম দেয়। তাই বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করতে পারেন।

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :

আদা : আদাতে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট “জিঞ্জেরল” (Gingerol) আছে, এটি শরীরে ফ্রি র‌্যাডিকেলের বেড়ে ওঠা কমায় ও এগুলির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকে সারাতে সাহায্য করে। আদা অস্বস্তি ও বমিবমি ভাবও কমায়।

আদায় উপস্থিত প্রদাহ দূরকারী বৈশিষ্ট্য পাচক রসের উৎপাদন উন্নত করে ও পাকস্থলীর অ্যাসিডগুলিকে নিবারিত করে। শিশুর পেট ব্যথা হলে আদা চা দিতে পারেন। এতে তার ব্যথা কমে যাবে এবং দ্রুত আরাম পাবে।

তাপ : শিশুর পেট ব্যথা হলে তাকে গরম শেক দিন যেমন : পেটের ওপর গরম পানির ব্যাগ রাখুন। এটা একটা সীমা পর্যন্ত ব্যথাকে প্রশমিত করবে। যখনই আপনি তাপের প্রয়োগ করেন তখন তা ত্বকের উপরিতলে রক্তের সংবহন বাড়িয়ে তোলে, যা পেট ব্যথা কমিয়ে দেয়।

সহজপাচ্য খাবার :
পেট ব্যথা সত্ত্বেও যদি আপনার শিশু খিদে অনুভব করে, তবে তাকে একটু একটু করে খাওয়ার জন্য কম পরিমাণে সহজপাচ্য খাবার যেমন দই, টোস্ট, ভাত, ওটমিল ইত্যাদি দিন।

তা ছাড়াও, সহজপাচ্য খাবার আপনার শিশুর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্টকে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

শারীরিক সক্রিয়তা : আপনার সন্তান বিছানায় শুয়ে থাকলে তাকে ঘরের বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করার জন্য উৎসাহিত করুন। কারণ বিছানায় শুয়ে থাকা তার পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে না।

গবেষণায় বলা হয়েছে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে তা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্টের মধ্যে সচলতায় সাহায্য করে। যেখানে একটানা বিছানায় শুয়ে থাকা কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে।

ক্যামোমাইল- চা :
ক্যামোমাইল চায়ে ব্যথা কমানোর ও প্রদাহ দূরকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। পেটে ব্যথা থেকে আরাম পেতে, এক কাপ ক্যামোমাইল চা বানান এবং তা আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বিরতিতে চুমুক দিয়ে পান করতে দিন।

ক্যামোমাইল পরিপাক নালীর উপরাংশের পেশীকে আরাম দেয়, যা ঘুরে সেই সংকোচনকে কমায়। পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত পর্যন্ত খাদ্যকে ঠেলে নিয়ে যায়। পরিশেষে, এটি সংকোচন ও পেটের খিচুনির উপশম করে।

পুদিনা- চা :
পুদিনা পাতার এই রিফ্রেশিং চা আপনার শিশুর পেটে ব্যথার উপশম করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আপনার পেটের পেশীর ওপর পিপারমেন্ট বা পুদিনার একটা আরামদায়ী প্রভাব এনে দেয়। পুদিনায় পিত্তরসের প্রবাহকে উন্নত করে। খাবার হজম করতেও এটা সাহায্য করে।

দই : বদহজমে দইকে সবথেকে সেরা প্রতিকার হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রতিদিন আপনার বাচ্চাকে এক বাটি দই খাওয়ানোর একটা অভ্যাস তৈরি করে নিন। দইয়ে ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজমে সাহায্য করে।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...