Skip to main content

পেট ফাঁপার কারন এবং এর প্রতিকার


পেট ফাঁপা, পেট গুড়গুড় করা এগুলি অনেকের ক্ষেত্রেই নিয়মিত সমস্যা। এই অস্বস্তিকর অবস্থায় পেট ভারী লাগে, হজমের সমস্যা হতে পারে। পেট ফাঁপলে তা ঠিক করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এই সময়ে অনেক ক্ষেত্রে পেট শক্ত হয়ে যায়। আর এর জন্য দায়ী কয়েক ধরনের খাবার খাবার ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। সেই কারণেই পেটে গ্যাস হয়ে রেট ফাঁপে। ফলে কিছু খাবার রয়েছে যা খাওয়ার সময়ে আগে বা পরে জল খেতে হয়। যাতে পেটের মধ্যে বেরনো রসের সঙ্গে মিশে তা সহজে হজম হতে পারে।এসব ছাড়াও ছেলেদের ক্ষেত্রে টাইট প্যান্ট পরে থাকা, মেয়েদের ক্ষেত্রে টাইট টপ পরে থাকা, কোমরে টাইট বেল্ট পরা ও পানি কম খাওয়ার কারণে পেট ফাঁপতে পারে। দেখে নিন, কোন কোন খাবার পেট ফাঁপায় বিশেষ ইন্ধন জোগায়।

আপেল : আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা বেশি পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপতে পারে। এর সঙ্গে ন্যাসপাতি খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

শাক-সবজি : পালং শাক ও অন্যান্য কয়েকটি শাকসবজি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী হলেও এগুলি পেটে গ্যাস তৈরির জন্য দায়ী। কারণ এতে থাকা রাফিনোজ ও ফ্রুকটান অন্ত্রে গ্যাস তৈরি করে।

পেঁয়াজ :
যেকোনও রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার আমাদের হয়েই থাকে। তবে বেশিমাত্রায় পেঁয়াজ খেলে পেটে গ্যাস হওয়াটা স্বাভাবিক।

শুকনো ফল :
বেশি পরিমাণে শুকনো ফল খেলে পেটে গ্যাস হওয়া অবশ্যম্ভাবী। তাই খুব কম পরিমাণে শুকনো ফল ডায়েটে রাখবেন।

দুগ্ধজাত খাবার: দুধ থেকে তৈরি যেকোনও খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। তবে এতে পেট ফাঁপে ভীষণ।

নানা ধরনে ডাল: নানা ধরনের ডাল খেলেও অনেক সময়ে পেটে গ্যাস-অম্বলের সমস্য়া হতে পারে।

ভুট্টা : ভু্ট্টা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে এতে থাকা উপাদান পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে।
মাশরুম : মাশরুমে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়া এতে ফাইবারও বেশি থাকায় খুব তাড়াতাড়ি পেট ফেঁপে যায়।

মূলাঃ আপনি যদি মূলা খেতে বেশি পছন্দ করেন তাহলে গ্যাসের সমস্যা হবে। এই সবজিটি সবচেয়ে বেশি গ্যাসের কারণ ঘটানো সবজি হিসেবে স্বীকৃত।

আপনি মিষ্টি ভালোবাসেনঃ  যারা মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ! মিষ্টিতে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি বা কৃত্রিম চিনি থাকে। কৃত্রিম চিনি আমাদের পাকস্থলি হজম করতে পারে না। এটা পেটে জমা হতে থাকে এবং গ্যাসের সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক চিনিও গ্যাস সৃষ্টি করে থাকে। 

সোডা ও কোমল পানীয় খাওয়া ঃ আপনি যদি সোডা ও কোমল পানীয় ছাড়তে না পারেন, তাহলে প্রস্তুত থাকতে হবে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা আসতে পারে। সোডা ও কার্বনেটেড কোমল পানীয়তে প্রচুর বাতাস আটকে রাখা হয়। এগুলো পান করবেন তাহলে পেটে গিয়ে সেগুলো তো কোন না কোনভাবে বের হবেই। তখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন।

অনেক সালাদও এ সমস্যা নিয়ে আসতে পারে  :  স্বাস্থ্যকর জিনিসের কথা মাথায় এলে আপনারা নিশ্চয়ই বিভিন্ন সালাদের কথা বলেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর সালাদে প্রচুর শর্করা থাকে যা হজম করার সময় গ্যাসের সৃষ্টি করে থাকে। এই গ্যাস থেকে পেট ফাঁপা ও অতিরিক্ত বায়ু নির্গত হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা : আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এক বা একাধিকবার এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাস্তার পাশের দোকান থেকে কিছু খেলেন বা বাসি কিছু খেলেন তাহলে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে। এবং বায়ু নির্গত হওয়ার ঝামেলায় পড়বেন।


কিছুদিন হলো বাচ্চার মা হয়েছেন : আপনি সম্প্রতি একটি সুন্দর সন্তানের মা হয়েছেন। এরপর কয়েকদিন আপনার পাকস্থলিতে গ্যাসের সৃষ্টি হবে এবং বায়ু নির্গত হওয়ার সমস্যা চলবে। ভয় নেই, কয়েকদিন পর এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

প্রচুর চাপে আছেন:  স্ট্রেস কখনো ভালো কিছু নিয়ে আসে না। আপনার জীবনে স্ট্রেস বা চাপের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরের ওপর দিয়েও ধকল যায়। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে এই বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়টিও রাখবেন। আপনি যদি প্রচুর চাপের মধ্যে থাকেন তাহলে আপনার পাকস্থলিতে গ্যাসের সৃষ্টি হবে। এখন থেকে চাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে এটাও মনে রাখতে পারেন।

এই পেট ফাঁপা, গ্যাস বা বায়ু নির্গত হওয়ার সমস্যাটি একটি বিব্রতকর সমস্যা। কী কারণে এই সমস্যা হতে পারে তা জেনে গেলেন। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনার গ্যাসের সমস্যা এবং পেট ফাঁপা।

যে নিয়ম মেনে চললে ভালো হয়ঃ

১. খাবার ভালো মত চিবিয়ে খেতে হবে।কম চিবানো খাবার পরিপাক কম হয়।

২. মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।এটি পেট ফাঁপার অন্যতম কারণ।

৩. ঢেকুর যদি দুর্গন্ধ যুক্ত হয় তবে খাবারে মাংস, ডিম কমাতে হবে এবং ডাল বাদ দিতে হবে।

৪. আঁশযুক্ত সবজি – সাজনা, বরবটি, বাধাকপি, শিম কমিয়ে দিতে হবে।

৫. খুব বেশি তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৬. আচার, চাটনি, মিষ্টি বাদ দিতে হবে।

৭. রাতের খাবার হবে হালকা। ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।

৮. সিমের বিচি, ডাল, মাঝে মাঝে লেবুও গ্যাস এর সমস্যা করতে পারে।


প্রতিকারঃ

আর যদি হয়েই যায় এ ধরনের সমস্যা তাহলে যা করনীয় –

১। ব্যায়াম করলে ছোট খাটো পেটের সমস্যা, পেট ফাঁপা থেকে কোষ্ঠ দূর হয়। পাচক নলে খাদ্য চলমান হয় সাবলীল গতিতে, বর্জ্য নিষ্কাশন হয় সহজে। কমে মনের চাপও।

২। খাবারের দিকে খেয়াল রাখবেন। পেটের জন্য উত্তেজক বা পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় অথবা পেটে ব্যথা তৈরি করতে পারে এমন খাবার পরিহার্য। পেটের জন্য উত্তেজক বা পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার পরিহার্য।
কিছু কিছু খাদ্য পেটে গ্যাস তৈরি করে যেমন শিম, বাদাম তৈলাক্ত খাবার ও পনির, যাদের সহ্য হয় না এবং এরা এসব এড়িয়ে যাবেন। অনেকে আবার কমলার রস, কফি, চা, টমেটো খেলে সমস্যায় পড়েন।

৩। ধূমপান বা মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করা উচিত।

৪। খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবেন না, আস্তে ধীরে চিবিয়ে খান। একটু সময় নিয়ে খাবার কে সময় নিয়ে গিলুন। গোগ্রাসে গেলা ঠিক না। পেটে বাতাস ঢুকবে না ।

৫। আচার, চিপস ও নোনা খাবার যত কম খাবেন তত ভালো। লবণ কম খাবেন।

৬। দুধ সহ্য হয় না, অর্থাৎদুগ্ধ শর্করা ল্যাকটোজ হজম হয় না। তাই দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য খেলে প্রচুর গ্যাস হয় পেটে। এমন হলে দুধ, পনির, দুধজাত খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন। সয়া দুধ অথবা দই খাওয়া যেতে পারে। কারণ দই এ ল্যক্টজ ল্যক্টিক এসিড হয়ে যায়।

৭। কিছু না হতেই মেডিসিন খেয়ে নিবেন না। এরপরেও ভালো না হলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।

এই বিষয় গুলো মনে রাখলে এবং মেনে চললে সহজেই আপনি পেট ফাঁপা সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।



Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...