Skip to main content

শিশুর পেটে গ্যাস



শিশুর পেটে গ্যাস হলে মায়েদের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারা তখন খুব চিন্তায় পড়ে যান তার বাচ্চার কি করলে ভাল লাগবে। কান্নাকাটি একটু থেমে যাবে কিংবা কোন্ ডাক্তারের কাছে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার অনেক মায়েদের বেলায় বলতে শোনা যায় যে বাচ্চার পেটে বাতাস লেগেছে তাই পেট ফুলে গেছে বা কোন খাবার খেতে পারছে না দুধে বাতাস লেগেছে যার কারণে দুধ মুখে দিলে খেতে পারছে না বমি করে ফেলে দিচ্ছে। তারা মসজিদের হুজুরের পানি পড়ার জন্য ছোটাছুটি করে।

আসল কথা হলো পেটে গ্যাস বাচ্চাদেরও হয় আবার বড়দেরও হয়। বাচ্চারা বলতে পারে না যে তাদের কেমন লাগছে আর তাই আমরা বুঝতেও পারি না যেমন ছোট শিশুর জ্বর হলে ঠা-া লাগলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কিন্তু গ্যাস হয়েছে বা পেটের ব্যথায় বাচ্চা কান্নাকাটি করছে সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি না।

বাচ্চার পেটে গ্যাস হওয়ার প্রথম কারণটা হচ্ছে- খাওয়ার ভুল পদ্ধতি, বদহজম হয়ে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া যার দরুন ছোট্ট শিশুদের পেট ব্যথা করে। নবজাতক শিশুর বেলায় গ্যাস সৃষ্টি হয় মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময়। কারণ বাচ্চা যখন দুধ পান করেন তখন হয়ত দুধের নিপিলটা মুখে পুরোটা না একটু ফাঁকা থাকে আর এতেই বাতাস ঢুকে পেটে গ্যাস হয়। আবার মায়েদের দুধ ভেঙ্গে যাওয়া অর্থাৎ মায়ের দুধের ভেতর লেকটোস জাতীয় একটি পদার্থ থাকে সেটা ভেঙ্গেও গ্যাস তৈরি হয়। এতে পায়খানাটাও নরম হয়। আবার ফিডারে দুধ পান করার সময় কিছু বাতাস শিশুর পেটে প্রবেশ করে এতেও গ্যাস হয়। ঢোক গেলার সময়ে পেটে বাতাস প্রবেশ করে এই রকম বিভিন্ন প্রকারের নবজাতক শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে।

৫-৬ মাস বয়সের শিশুদের বেলায় বুকের দুধের পাশাপাশি একটু বাড়তি খাবার দেয়া হয়। এতে খাবারের পরিবর্তনের কারণেও অনেক সময় পেটে গ্যাস হতে পারে। ৫-৬ মাসের শিশুদের বাড়তি খাবারে বিভিন্ন প্রকার ফল/ শাক-সবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং মাছ/ মাংস ও ডিম দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় খিচুড়িতে শাকের পরিমাণ বেশি হলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার ডালেও গ্যাস হতে পারে এমনকি সিদ্ধ ডিমেও গ্যাস হতে পারে। তাই মায়েদের উচিত বাড়তি খাবার দেয়ার সময় খাবারের দিকে নজর রাখা যেমন- খিচুড়িতে শাক ও ডালের পরিমাণ কম দিয়ে কাঁচা কলা বা কাঁচা পেঁপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।


আর তাছাড়া নবজাতক শিশুর জন্য কিছু হাল্কা ব্যায়াম আছে যেমন এক হাত/ এক পা ধরে পা’টা মাথার সঙ্গে আর হাতটা পায়ের কাছে আনতে হবে এভাবে দুই থেকে চারবার করলেই হবে এতে পেটে চাপ পড়ে কিছুটা গ্যাস কমে যাবে।

নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস বা বাতাস কমানোর জন্য খাওয়ার পর পরই বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ বুকের হোক বা ফিডারের হোক নিপলের দিকে খেলাল রাখতে হবে যেন শিশুর মুখের চারপাশে ফাঁকা না তাকে অর্থাৎ বাতাস না ঢুকতে পারে আর খাওয়ানোর পর মায়ের ঘাড়ের বাঁ পাশে ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের ওপর হাত নিচের দিকে হাত দিয়ে নামিয়ে দিতে হবে যাতে বাতাস বের হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা দেখি ড্রপের সাহায্যে বাতাস বের করা যেতে পারে।

খাওয়ার ভুল পদ্ধতির কারণে জোর করে খেলে বা বেশি খেলে বদহজম এর কারণে পেটে গ্যাস জমে আর এতে করে অনেক সময় বাচ্চাকে বমি ও করতে দেখা যায় এবং পেটের ব্যথায় বাচ্চাকে কান্না করতে ও নবজাতক শিশুকে ঢেকুর তুলতে দেখা যায়।

বাচ্চার পেটে গ্যাস জমে গেলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ঘন ঘন বমি না করে বমির পরিমাণ বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকুন যেন বাতাস শিশুর পেটে না ঢোকে। আর ৫-৬ মাস বয়সের শিশুদের বাড়তি খাবার দেয়ার সময় যে খাবারের গ্যাস হতে পারে তার পরিমাণ কমিয়ে দিন আর ভাত বা খিচুড়ি যেন শক্ত না হয় একটু নরম করে দিন ফলমূলটাকে মা চিবিয়ে অথবা একটু জুস করে খাওয়ান এতে করে হজমে সুবিধা হবে এবং শিশুর পেটে গ্যাসের প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...