Skip to main content

পেটের গ্যাস সমস্যার থেকে মুক্তির উপায়...

গ্যাসের সমস্যা হলে কি করবেন, কিভাবে মুক্তি পাবেন এ সমস্যা থেকে। না আমি রান্নার গ্যাসের কথা বলছিনা। পেটের গ্যাসের যন্ত্রণায় ভোগেননি বা প্রচলিত ভাষায় “পেট ফেঁপে” যায়নি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন।


পেটে গ্যাসের আক্রমণ কেন হয়, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আপনি সহজেই অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে পারেন। আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি বেশি খেলে পাকস্থলী তার সবটা সহজে পরিপাক করতে পারে না। কিছু খাবার অপরিপাক অবস্থায় চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে। সেখানে কিছু ব্যাকটেরিয়া ওসব খাবার খায়। এদের আয়ু খুব কম। মৃত ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে গ্যাস তৈরি হয়। আর অস্বস্তির কারণ এটাই।


সম্পূর্ণ গম বা আটা দিয়ে তৈরি খাবারগুলো পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পিঠা, বিস্কিট ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য পরিত্যাগ করুন।
ফল এবং সবজি কাঁচা খাওয়ার পরিবর্তে সেদ্ধ বা রান্না করে খান। পেটের গ্যাস এতে কমে যাবে অনেকটাই।

পেটে গ্যাস হলে তরকারিতে সামান্য বেশি পরিমাণে হলুদ দিন। হলুদ পেটের গ্যাস কমাতে খুবই সাহায্য করে।


গ্যাস এড়াতে যা যা খাবেন না

১) ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার

ডাল, বুট, ছোলা, বীণ, সয়াবিন ইত্যাদি ধরণের খাবার গ্যাস উদ্রেকককারী খাবার। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায় না। ফলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে পেটে।

২) ব্রকলি, পাতাকপি, বাঁধাকপি

এইধরনের সবজিগুলোতে রয়েছে ‘রাফিনোজ’ নামক একধরণের সুগার উপাদান যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্ট না করা পর্যন্ত হজম হয় না। এবং এই অবস্থায় পেটে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।


৩) দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পর যদি দেখেন পেটে গ্যাস হচ্ছে তার অর্থ হচ্ছে আপনি লাক্টোজ ইন্টলারেন্ট অর্থাৎ আপনার দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজমে সমস্যা রয়েছে। হজম হয় না বলেই এগুলো আপনার পেটে গ্যাস উদ্রেকের জন্য দায়ী।

৪) আপেল ও পেয়ারা

আপেল ও পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্রক্টোজ ও সরবিটোল নামক সুগার উপাদান যা সহজে হজম হতে চায় না। এতে করেও গ্যাস হয় পেটে।

৫) লবণাক্ত খাবার

লবণের সোডিয়াম অনেক বেশি পানিগ্রাহী। অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেলে দেহে পানি জমার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলীতেও সমস্যা শুরু হয় ও খাবার হজম হতে চায় না।

এছাড়াও ধীরে ধীরে ও ভাল করে চিবিয়ে খাবার খান , চুইংগাম ও শক্ত ক্যান্ডি পরিহার করুন, কার্বনেটেড কোমল পানীয় ও বিয়ার এড়িয়ে চলুন। এগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে।

গ্যাস সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা যা খাবেন :

১) শসা

শসা পেট ঠা-া রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।

২) দই

দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।

৩) পেঁপে

পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।

৪) কলা ও কমলা

কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলার স্যলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে।

৫) আদা

আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।

খাবার খাওয়ার সময় মাঝে মাঝে অল্প অল্প করে পানি পান করুন, কিন্তু খাবার শেষে একটু দেরি করে (১ ঘণ্টা পরে) পানি পান করুন। এবং কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুণ। রোগ মুক্ত থাকুন। সুস্থ থাকুন।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...