Skip to main content

পেটে ব্যথা কখন ঝুঁকিপূর্ণ?



বিভিন্ন কারণে পেটে ব্যথা হয়।

প্রশ্ন : অনেক কারণ রয়েছে পেটে ব্যথার। জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে, কোনো না কোনো সময়ে, এই পেটে ব্যথাগুলো সবারই হয়। একটু জানতে চাইব পেটে ব্যথার প্রধান কারণগুলো কী ?

উত্তর : আমাদের কাছে সাধারণত যত রোগী আসে, এর এক তৃতীয়াংশ রোগী পেটের ব্যথা নিয়ে আসে। আর এই পেটের ব্যথা সাধারণ থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। সবটাই নির্ভর করে রোগীর বয়স, ব্যথার সময়, অন্যান্য সমস্যা- যেমন জ্বর হচ্ছে কি না, বমি হচ্ছে কি না, পায়খানা কেমন হচ্ছে, এই সবই মিলে আমরা ধারণা করি পেটের ব্যথা সাধারণ না কি ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রশ্ন : পেটের ব্যথা হলে অনেকেই মনে করেন গ্যাসট্রিকের ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা। আপনাদের কাছে যখন আসে তখন কী কী সমস্যা নিয়ে আসে?

উত্তর : অনেকে পেট ব্যথা হলেই ভাবে গ্যাসের কারণে ব্যথা। তবে এটি ভুল। পেটের ব্যথায় যদি রোগী গ্যাসের কারণে ব্যথা ভেবে ওষুধ খেয়ে ফেলে তখন আমাদের কাছে এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন : একজন রোগী বলছে আমার পেটে গ্যাস আটকে গেছে। আমার কাছে যখন এলো, তখন সে রীতিমতো তিন চার মাস দেরি করে ফেলছে। আমি তার পেটে হাত দিয়ে দেখলাম চাপ দিলে কোনো ব্যথা পাচ্ছে না। কিন্তু তার শরীরটা ঘেমে গেছে, ভিজে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে তার কোনো পদ্ধতিগত সমস্যা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে রোগীর জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের হার্টের নিচের সীমায় যদি সংক্রমণ হয়ে যায়, তখন পেটের ব্যথা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে যদি রোগী গ্যাস মনে করে বাড়িতে অপেক্ষা করে তবে ক্ষতি হতে পারে। কাজেই যদি কখনো কারো এ রকম একটি অবস্থা হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ পেটের ব্যথা আমরা কীভাবে বুঝব?

উত্তর : শুধু পেটের ব্যথা নয়, যেকোনো ব্যথায়, বিশেষ করে পেট ও বুকের কথা বলছি, সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিন্তা করতে হবে আমার এর সাথে আর কী কী রয়েছে। আমার শরীরটা ঘেমে গেল আমি অস্থির হয়ে গেলাম, দুর্বল হয়ে গেলাম। অথবা আমার পেট ব্যথা রয়েছে। এর সাথে আমার জ্বর আসছে। অথবা এর সাথে পাতলা পায়খানা হয়েছে। এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে। এগুলো দিয়ে আমরা বুঝব এটি সাধারণ নয়। যখন তাদের এই অবস্থা হচ্ছে তখন দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকরাও কিন্তু প্রথম পর্যায়ে জানবে না তার কী হয়েছে। তখন তাকে পর্যালোচনা করবে। তার বয়স দেখবে, তার ইতিহাস নেবে, তার কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাবে। তার শারীরিক পরীক্ষা করাবে। এরপর ধরা হবে তার কী কারণে পেট ব্যথা হয়েছে।

হয়তো তরুণ একটি মেয়ে এসেছে, তার হয়তো দুই তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছে, সে ভালোই আছে। হঠাৎ করে সে প্রচুর তলপেটে ব্যথা নিয়ে এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পড়ে গেল। এখন সে যদি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে না আসে কী হতে পারে? চিকিৎসকের কাছে আসার পর দেখা গেল তার রক্তচাপ কমে গেছে এবং সে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ইতিহাস নিয়ে দেখা গেল, তার গত মাসে ঋতুস্রাব হয়নি। তার মানে তার পেটে টিউমার হয়েছে সেটি ফেটে গিয়ে হয়তো পেটের মধ্যে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে, পেট ব্যথা করছে।

জরুরি অবস্থা তখনই বুঝতে পারবে যখন তার পেট ব্যথা হলো সাথে তার আরো অনেক লক্ষণ বা সমস্যা হলো। আসলে একটি ব্যথার সাথে আরো যেই শারীরিক বিষয়গুলো হচ্ছে সেগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : কোন কারণে পেটে ব্যথা হচ্ছে সেটি নির্ণয়ে কী কী ধরনের পরীক্ষা –নিরীক্ষা করা হয়?

উত্তর : এটি নির্ভর করে রোগীর ইতিহাসের ওপর। যদি একটি রোগী এসে বলে আমার পেটে ব্যথা হয়েছে সাথে একবার দুইবার বমি হয়েছে, একটু একটু জ্বর হচ্ছে- তাকে আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখব তার অ্যাপেনডিসাইটিক্স হয়েছে কি না, তার প্যানক্রিয়াটিটস হয়েছে কি না। অথবা কেবল গ্যাসট্রিকের ব্যথা কি না। সাধারণ গ্যাসট্রিকের ব্যথায় তার জ্বর হতে পারে, বমি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা করার পর আমরা তার একটি রক্ত পরীক্ষা করাব। সিবিসি, সিরাম ইলেকট্রোলাইট, সিরাম এমএল, লিভার ফাংশন টেস্ট এগুলো দিতে পারি এবং ইউরিন পরীক্ষাও করতে পারি এর সাথে। কারণ পেটের মধ্যে কিডনিও আছে সেখানে সংক্রমণ হয়ে ব্যথা হতে পারে। এর সাথে একটি আলট্রাসোনোগ্রাম করি, কখনো কখনো পেটের এক্সরেও করি। যেগুলো দ্রুত করতে হয়, সেগুলো হলো, পেটের এক্সরে, কিছু রক্তের পরীক্ষা ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম। এগুলো করলে ৯৫ ভাগ আমরা ধরে ফেলতে পারব তার কী কারণে ব্যথা হয়েছে। আর কারণের ওপর নির্ভর করবে চিকিৎসা।

প্রশ্ন : কোন কোন কারণের ক্ষেত্রে কী কী ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?

উত্তর : যদি শুধু গ্যাসের জন্য সমস্যা হচ্ছে মনে করি তাহলে আর রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ে না। হয়তো দ্রুত কিছু চিকিৎসা করলাম। বাকি ওষুধগুলো চিকিৎসাপত্রে লিখে তাকে ছেড়ে দিলাম। পাশাপাশি তাকে কিছু পরামর্শ দিয়ে দিলাম।

যদি দেখি তার বিলিয়ারিতে ব্যথা হচ্ছে , দেখতে হবে পাথরের জন্য ব্যথা হচ্ছে কি না। পাথর কোথায় হয়েছে, কোথাও আটকে গেছে কি না এবং সেটিতে সার্জারির প্রয়োজন হবে কি না, সেটিও আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে ধরে ফেলতে পারব। আর যদি প্যানক্রিয়াটাটিস হয়, এই ক্ষেত্রে রোগীকে ভর্তি করতে হবে।

প্রশ্ন : পেটে ব্যথা নিয়ে কখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?

উত্তর : সাধারণত একজন বৃদ্ধ মানুষের যদি পেটে ব্যথা হয়, সে যদি বমি করে এবং ঘেমে যায়, তখন তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটি বাচ্চা যদি প্রচুর চিৎকার করে বমি করে এবং তার জ্বর আসে, তখন তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তবে প্রাপ্ত বয়স্করা হয়তো একটু দেরি করতে পারে।

প্রশ্ন : তাহলে এই যে গ্যাসের ব্যথা মনে করা হচ্ছে এবং ওষুধ খেয়ে নেওয়া হচ্ছে, একে কতটুকু যৌক্তিক মনে করেন? কখন আসলে এটি খাওয়া উচিত?

উত্তর : যদি কারো ব্যথা হয়, তবে ব্যথাটি অতো তীব্র না হয়, হঠাৎ করে ব্যথাটি শুরু না হয়, ওষুধ খাওয়ার পর আস্তে আস্তে যদি তার ব্যথাটা কমে যায়, বমি, জ্বর, পাতলা পায়খানা, শরীর ঘামা- এসব সমস্যা না হয়, তখন সে ওষুধ খেয়ে অপেক্ষা করতে পারে।

প্রশ্ন : পেটে ব্যথা হলে প্রাথমিকভাবে কী করণীয়?

উত্তর : যদি আপনি গ্যাসের কারণে পেটে ব্যথা মনে করেন এবং এর সাথে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণগুলো প্রকাশ না হয়, তাহলে গ্যাসের ওষুধ দিতে পারেন। সিরাপ দিতে পারেন। ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ওষুধ আছে সেগুলো দিতে পারেন। তবে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনার ঝুঁকির বিষয়গুলো হয়নি।

বয়স কত, হঠাৎ করে সমস্যা হয়েছে কি না, তার বমি হয়েছে কি না, জ্বর এসছে কি না-এই বিষয়গুলো সাথে না থাকলে খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করলেই হয়।



Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...