Skip to main content

আলসার কী? এর লক্ষণ, উপসর্গ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা, বাড়তি সতর্কতা, প্রতিরোধ সর্ম্পকে বিস্তারিত....


পেটের আলসার

পেটের আলসার কনটেন্টটিতে পেটের আলসার কী, লক্ষণ, উপসর্গ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা, বাড়তি সতর্কতা, প্রতিরোধ সর্ম্পকে বর্ণনা করা হয়েছে।
পেটের আলসার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। সচেতন হলে এই রোগ অনেকখানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া বর্তমানে সফলভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

পেটের/পাকস্থলীর/ক্ষুদ্রান্তের আলসার কি    
পাকস্থলীর আলসার হলো একধরনের ঘা যা পাকস্থলীর ভিতরের আবরণ, উপরের ক্ষুদ্রান্ত অথবা খাদ্যনালীতে সৃষ্টি হয়ে থাকে। পাকস্থলীর আলসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পেট ব্যথা।

পেটের/পাকস্থলীর ক্ষুদ্রান্তের আলসার হয়েছে কি করে বুঝবেন
পেটের/পাকস্থলীর ক্ষুদ্রান্তের আলসার হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:
  • রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো তীব্র ব্যথা।
  • নাভী থেকে শুরু করে বুকের হাড় পর্যন্ত এই ব্যথা অনুভূত হয়।
  • ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
  • পাকস্থলী খালি থাকলে ব্যথা আরো বেশী অনুভূত হয়।
  • খাবার খেলে বা এসিডের ওষুধ খাওয়ার ফলে সাময়িকভাবে ব্যথার উপশম হয়। আবার ক্ষুদ্রান্তের আলসার বা ঘাতে খাবার খাওয়ার পর ব্যথা বাড়ে।
  • ব্যথা চলে গিয়ে কিছু দিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য আবার ফিরে আসে।

অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গ
  • লাল অথবা কালো রংয়ের রক্ত বমি।
  • পায়খানার সাথে গাঢ় রংয়ের রক্ত যাওয়া অথবা পায়খানার রং কালো অথবা আলকাতরার রংয়ের মত হওয়া।
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
  • হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • খাবারে রুচির পরিবর্তন হওয়া।

কখন ডাক্তার দেখাবেন
পেটের/পাকস্থলীর/ক্ষুদ্রান্তের পাকস্থলীর আলসারের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার যেভাবে বলেন সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহন এবং ওষুধ সেবন করতে হবে। মনে রাখতে হবে  এ্যান্টাসিড বা এসিডের ওষুধ খেলে শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য ব্যথামুক্ত থাকা যায়। কাজেই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র তা উপেক্ষা না করে অথবা নিজে নিজে কোন ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

কি কি পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
আমাদের দেশে সাধারণত রুগীর ইতিহাস শুনে ও লক্ষণ দেখে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
এছাড়াও যে পরীক্ষা গুলো করতে হয় সেগুলো হলো:
  • রক্ত পরীক্ষা
  • শ্বাস পরীক্ষা
  • এক্স রে
  • গলার ভিতর নল ঢুকিয়ে পরীক্ষা (এন্ডোসকপি)
কি ধরনের চিকিৎসা আছে
  • ঔষধ দিয়ে শতকরা ৯৯% ক্ষেত্রে রোগ ভালো হয়।
  • আলসারের জন্য কোন জটিলতা দেখা দিলে-সার্জারী বা শৈল্য চিকিৎসা লাগতে পারে।

বাড়তি সতর্কতা
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। ব্যথার ওষুধ খেলেও তা ভরাপেটে খেতে হবে এবং সাথে গ্যাসের ওষুধ খেতে হবে।

পেটের/পাকস্থলীর/ক্ষুদ্রান্তের আলসার কিভাবে প্রতিরোধ করবেন
  • ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না।
  • খাওয়া দাওয়া নিয়মমতো ও সময়মতো করতে হবে।
  • অতিরিক্ত ঝাল,মসলা ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
  • খাবার পরপরই শুয়ে পড়া উচিৎ নয়।
  • ওজন কমানো।

সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন.১. পেটের/পাকস্থলীর/ক্ষুদ্রান্তের আলসার কেন হয়?
উত্তর.একধরনের জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাক্টার) এই রোগের কারণ। এছাড়া খাবারে অতিরিক্ত তেল,মসলার ব্যবহার, নিয়মিত ব্যথার ওষুধ সেবন,অতিরিক্ত চাপ এবং ধূমপান করলেও পাকস্থলীর আলসার হতে পারে।


প্রশ্ন.২. পাকস্থলীর আলসার থেকে কি ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর. পাকস্থলীর আলসার থেকে যে ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে তা হলো: পাকস্থলী/ক্ষুদ্রান্ত ফুটো হয়ে যাওয়া ও তার থেকে পেটের ভিতরে সংক্রমণ হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

প্রশ্ন.৩. পাকস্থলীর আলসার কাদের বেশী হয়?
উত্তর. যারা : ১.অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বা বেশী বেশী ব্যথা কমানোর ঔষধ খান,২.অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খান,৩.ধূমপান করেন,  নেশা জাতীয় জিনিস সেবন করেন, তারা পাকস্থলীর আলসারের সমস্যায় বেশী ভুগে থাকেন।

Comments

  1. ধন্যবাদ তথ্যবহুল পোষ্ট এর জন্য। আমার আলসার ধরা পরেছে। পোষ্ট টা খুবই কাজে লাগলো।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...