পেপটিক আলসার সবচেয়ে পরিচিত একটি রোগ৷ কেউ কেউ একে গ্যাস্ট্রিক নামে অভিহিত করেন৷ আমাদের জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশ এই রোগে ভুক্তভোগী এবং এদের মধ্যে পুরুষই বেশি৷ বিশ বছর থেকে পঞ্চাশ পর্যন্ত যে কেউ আলসারে আক্রান্ত হতে পারেন৷
আলসার হচ্ছে অন্ত্রের দেয়ালে তৈরি এক ধরনের ক্ষত, অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ফলে এই ক্ষতগুলো তৈরি হয়৷ খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ডিওডেনাম বা অন্ত্রের শুরুর কিছু অংশে আলসার হতে পারে৷
প্রধানত পাকস্থলী বা ডিওডেনামেই আলসার দেখা দেয়, সে-অনুযায়ী আলসার দুই ভাগে বিভক্ত: গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার এবং ডিওডেনাল আলসার৷ রোগ-প্রক্রিয়া মোটামুটি একইরকম হলেও এদের উপসর্গে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে৷
আলসারের সঙ্গে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্ক প্রায় অবিচ্ছেদ্য৷ তাই ব্যাকটেরিয়াটিকে সমূলে বিনাশ না করা পর্যন্ত আলসার সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না৷ সাধারণ কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে বিপজ্জনক এই শত্রুকে বিনাশ করা সম্ভব৷ সেজন্যে অবশ্য আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে৷
কিভাবে বুঝবেন পেপটিক আলসার হয়েছে :
আলসারে পেটে ব্যথা হয়৷ কিন্তু ব্যথার চেয়েও বেশি পরিচিত উপসর্গ হচ্ছে বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া কিংবা মুখে টক পানি চলে আসা৷ আলসারের রোগীরা ব্যথার চেয়ে এ দুটি উপসর্গের সঙ্গেই বেশি পরিচিত৷
আলসারের ব্যথার তিনটি সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে: ওপরের পেটে ব্যথা অনুভব করেন বেশিরভাগ রোগী, যা সাধারণত এপিগ্যাস্ট্রিক (ঠিক নিচেই পাকস্থলীর অবস্থান) অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে, খাদ্যের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং পর্যায়ক্রমিক প্রকোপ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যথা হয়৷ আলসারের ব্যথা মারাত্মক হতে পারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী নিজেই আঙুল দিয়ে জায়গাটি দেখিয়ে দেন৷ গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের কিছুক্ষণ পরই ব্যথা হয়, কিন্তু ডিওডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটে৷ খালি পেটে ব্যথা অনুভব করেন রোগীরা, অনেক সময় ব্যথায় রাতে ঘুম ভেঙে যায় এদের৷ খাবার গ্রহণ করলে ব্যথা উপশম হয়৷ তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যথাটি পর্যায়ক্রমিক (Episodic), অর্থাৎ কয়েক দিন বা কয়েক মাসের ব্যবধানে হতে পারে, এবং সাধারণত কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়৷ একমাস আলসারের প্রকোপ থাকার পর পরবর্তী দুই বা তিন মাস ভাল থাকেন রোগীরা, ঠিক তারপরই আবার শুরু হয়৷ দুর্ভাগ্যের বিষয়, দীর্ঘদিন আলসারে ভুগতে থাকলে মাঝখানের স্বস্তিকর সময়টা কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগের স্থায়িত্বও বাড়তে থাকে৷
অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে ক্ষুধামন্দা (ডিওডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে রোগীদের রুচি বরং ভাল থাকে), বমি বমি ভাব কিংবা বমিও হতে পারে, ওজন হ্রাস ইত্যাদি অন্যতম৷
Comments
Post a Comment