Skip to main content

আমাশয় কি ?



আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি বলতে অ্যামিবা যা এককোষী পরজীবী বা প্যারাসাইট এবং সিগেলা (shigella) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রে (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল) বাসা বেঁধে ঘা বা ইনফেকশন সৃষ্টি করে মলের সঙ্গে পেটে কামড়ানোসহ পিচ্ছিল আম অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত যাওয়াকে বোঝায়।



‘আধুনিক প্রযুক্তিতে কয়েকটি ভাইরাস, ছত্রাক ও কৃমি জাতীয় জীবাণুও আমাশয় সৃষ্টি করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে’


আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি অতি পরিচিত রোগ। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হয়।


আমাশয়ের কারণ


এই রোগে আক্রান্ত হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক ধরনের লোক আছে যারা ডাক্তারের কাছে এসে বলে, ‘আমার ক্রনিক ডিসেন্ট্রি। ১০ বছরের বা ১২ বছরের ডিসেন্ট্রি।’


যদি কারও বারবার পায়খানা হয়। পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত বা মিউকাস যায়, তখন আমরা একে বলি আমাশয়। আমাশয় প্রধানত দুই ধরনের-


* এমোবিক ডিসেনট্রি


* বেসিলারিক ডিসেনট্রি


এ আমাশয় দীর্ঘ মেয়াদি নয়। এগুলো স্বল্প মেয়াদির আমাশয়। তিন থেকে সাত দিনের হয়ে থাকে। চিকিৎসা না করা হলেও চলে যেতে পারে। তবে জোরালোভাবে যদি রোগী আক্রান্ত হয় তাহলে চিকিৎসা করা দরকার এবং পাঁচ থেকে সাত দিনের ভেতর ভালো হয়ে যাবে।


আরেক ধরনের মানুষ আমাদের দেশে আছে। যারা বলে, ‘আমার তো ক্রনিক ডিসেনট্রি।’ যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ক্রনিক ডিসেনট্রি বুঝলেন কীভাবে? বলবে, ‘আমার মলের সঙ্গে সব সময় মিউকাস যায়, আম যায়। পেটে ব্যথা থাকে। আসলে সেগুলো আমাশয় নয়।


তাহলে সেগুলো কী


আরেকটি রোগ রয়েছে যেটি আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। এটিকে বলা হয় আইবিএস। ইরিটেবল বা উয়েলসিনড্রম। এটা নাড়ি-ভুঁড়ির এক ধরনের ফাংশনাল রোগ। ফাংশনাল রোগ এ জন্য বলছি যে, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো কিছু পাওয়া যাবে না। কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়া যাবে না। কোনো ধরনের প্যাথলজি পাওয়া যাবে না। যদি প্যাথলজি পাওয়া না যায় তখন একে আমরা বলি ফাংশনাল রোগ। এ রোগের একটি প্রকৃতি হচ্ছে মাঝে মধ্যে মলের সঙ্গে আম যাওয়া। এটি আইবিএসেরই একটি লক্ষণ। এটি আমাশয় নয়।


আমাশয়ে রক্ত গেলে এবং পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে করণীয়


এমোবিক আমাশয় থেকে বেসিলারিক আমাশয় জোরালোভাবে হয়। এতে মলের সঙ্গে আম এবং প্রচুর পরিমাণ রক্ত যাবে। পেটে ব্যথা থাকবে, পায়খানা


হবে। অনেক সময় পেটে ব্যথাই হবে তবে পায়খানা


হবে না। অনেক সময় দেখা যাবে রোগীর সিস্টেমিক অন্যান্য রোগের অভিযোগগুলো চলে আসে। যেহেতু আপনি বারবার মলত্যাগ করছেন, বারবার শরীর থেকে পানীয় বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই ফ্লুইড দিতে হবে এটা হচ্ছে এক নম্বর। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- পায়খানার কালচার সেনসিটিভিটি করে যেভাবে রিপোর্ট আসে, ওই ভাবে তার অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে।


যেখানে কালচার সেনসিটিভিটি করার সামর্থ্য নেই বা রিপোর্ট পেতে রোগীর দুই তিন দিন সময় লেগে যেতে পারে, এতে করে রোগী মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে, তখন অনুসন্ধান ছাড়া যেই চিকিৎসা আছে, সেটা তাকে দিতে হবে। মূলত আমাশয়ের যে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক সেটা তাকে দিতে হবে। এতে ৯৫ শতাংশের বেশি কাজ হবে।


যদি আপনার এমোবিক আমাশয় হয়ে থাকে তাহলে মেট্রোনিডাজল পছন্দের ওষুধ হতে পারে। বেসিলারিক ডিসেন্ট্রির সঙ্গে এমোবিক ডিসেন্ট্রি কখনও কখনও একত্রে থাকে। এ মিশ্র আমাশয় থাকলে এমোবিক অংশটি মেট্রোনিডাজলে কাজ করবে।


মেট্রোনিডাজল নিজস্ব রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে বাউয়েল বা মলকে শক্ত করে দিতে পারে। অনেক সময় আমাশয় না হয়ে অন্য কিছু হলে মেট্রোনিডাজল তার পায়খানা শক্ত করে দেয়ার গুণ দিয়ে বাউয়েল মুভমেন্ট বন্ধ করে দেয়। রোগী ভাবল, আমার তো রোগ ভালো হয়ে গেছে। যেটা অনেক সময় আইবিএসের বেলায় হয়ে থাকে। তবে কয়েকদিন পর আবার একই রকম হয়ে যায়।


এক-দুই দিন খেয়ে ওষুধ বন্ধ করে দিলে...


সঠিক ব্যবহার, সঠিক ডোজ, সঠিক সময় মেনে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। অন্যথায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, রেজিসটেন্স সৃষ্টি হবে। যেখানে যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন সেটা দিতে হবে। যেই পরিমাণে দরকার, সেই পরিমাণে দিতে হবে। যেই স্থিতিকাল ধরে দরকার, সেটি দিতে হবে।


আইবিএসের রোগীদের সমাধান


ইরিটেবল বাউয়েলসিনড্রমকে আইবিএস বলে। এ রোগটি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্তের ফাংশনাল রোগ। এটি কোনো অঙ্গ-প্রতঙ্গের রোগ নয়। প্যাথোলজি করে কিছু পাওয়া যাবে না। এটি কোনো জীবাণু ঘটিত রোগ নয়। এর অর্থ পাকস্থলী ও নাড়িভুঁড়ির যে কর্মগতি সেই গতিতে একটু পরিবর্তন আসে। পরিবর্তন এলে ওই লক্ষণ মিলিয়ে যে রোগটি হয়, একে আমরা আইবিএস বলি। যেমন নাড়িভুঁড়ির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নড়াচড়া। এ নড়াচড়া যদি বেড়ে যায় তাহলে পাতলা পায়খানা হবে। কয়েক ধরনের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া আছে। ২৪ ঘণ্টায় একটি বড় নড়াচড়া হয়। ওই বড় নড়াচড়াটি যদি ঠিকভাবে না হয়, তাহলে হয়তো মলত্যাগে সমস্যা হবে। অথবা পাকস্থলীতে যদি সমস্যা হয়, তখন গ্যাস জমা হওয়ার একটি ভাব আসবে। নাড়িভুঁড়ির মাংসপেশিতে সমস্যা হয়ে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা পেট ফোলাভাব, পাতলা পায়খানা সব মিলিয়ে আমরা বলি ইরিটেবল বাউয়েলসিনড্রম, আইবিএস।


এ রোগ থেকে মুক্তির উপায়


যার আইবিএস রোগটি রয়েছে সেসব সময় হয়তো এ রোগে ভুগবে না। জীবনে কোনো কোনো সময়ে সে এ লক্ষণগুলোতে ভুগবে। কোনো কোনো খাদ্যাভ্যাসের ফলে এ ভোগান্তি হয়। যে কারণে ভুগবে ওই কারণগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। দেখা যায়, সে ভারী খাবার খাওয়ার কারণে ভোগে। তখন ভারী খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।


অনেক সময় দুধ খেলে বাড়ে, সেটি কমিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় শাকসবজি, সালাদ এগুলো খেলে সমস্যা হয়। এগুলো খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি হলেও এ সমস্যা হতে পারে। এগুলো কমাতে হবে।


আর কী কারণে ভুগছে এটি বুঝে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। পাতলা পায়খানা হলে, সেটি না হওয়ার জন্য যেই ওষুধ সেটি স্বল্পকালীনভাবে দিতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সেই জন্য স্বল্পকালীন ওষুধ দিতে হবে। গ্যাস হলে ওষুধ দিতে হবে। নড়াচড়াকে স্বাভাবিক করার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে সেটি চিকিৎসকরা বুঝে-শুনে দেবেন।


রোগী চিকিৎসকের কাছে আসে তিনটি কারণে। প্রথম হল- রোগী ভাবে আমার যে রোগটি হল এ রোগে আমি মরে যাব কিনা? দ্বিতীয়, আমার যে রোগটি হল এতে আমি অথর্বে পরিণত হব কিনা? তৃতীয়, এ রোগ আমাকে ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।


এ ভোগান্তি থেকে আমি মুক্তি পাব কিনা? আশার কথা হচ্ছে, আইবিএস রোগটি আপনাকে মৃত্যুর মুখে ফেলবে না। এ রোগের কারণে মানুষ সাধারণত মরবে না। এ রোগে বিছানায় পড়ে যাবে না। তবে মাঝে মধ্যে ভুগবে।


চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আরেকটি হল- এই রোগ নিয়ে রোগীর বেশি ভাবতে নেই। রোগ যদি আপনি সব সময় স্মরণ করেন, রোগও আপনাকে বারবার স্মরণ করবে।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...