Skip to main content

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #005

আমাশয় (Dysentery) অন্ত্রে সংক্রমনের কারণে প্রদাহজনিত পেট ব্যাথা ও শ্লেষ্মা বা রক্তসহ পাতলা পায়খানা সৃষ্টিকারী রোগ। আমাশয় প্রধানত দুপ্রকার, অ্যামিবিয় আমাশয় বা অ্যামিবিয়াসিস আর ব্যাসিলারি আমাশয় বা শিগেলোসিস।

অ্যামিবীয় আমাশয় (Amoebic dysentery, Amoebiasis) Entamoeba histolytica নামক এককোষী পরজীবীঘটিত আমাশয়। এ এককোষী জীবাণু অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি আক্রমণ করে এবং রোগ শুরু হলে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির স্থানে স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং সেগুলি থেকে শ্লেষ্মা, পচা দেহকোষ, অ্যামিবা-কোষ নির্গত হয়। রোগ লক্ষণে থাকে পেটব্যথা, ঘন ঘন শ্লেষ্মা সহকারে ঘন ঘন মলত্যাগ (দিনে ৩০ বার বা ততোধিক হতে পারে), মলত্যাগে যন্ত্রনা, বমি ও সাধারণ দৌর্বল্য। পেটে একটি বিশেষ ধরণের (tenesmus) ব্যথা অনুভুত হতে দেখা যায়। নাভীর চারপাশে কামড়সহ মলত্যাগের তাড়াহুড়ো ইচ্ছে কিন্তু বাথরুমে গিয়ে মলত্যাগের অতৃপ্তি। জীবাণুঘটিত রক্ত আমাশয়ে যেখানে মলের সঙ্গে টাটকা রক্তপাত ঘটে, সেখানে অ্যামিবীয় আমাশয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি ব্যতীত সাধারণত মলে কোনো রক্ত থাকে না।



অ্যামিবা পরজীবী জীবনচক্রের এক পর্যায়ে মানুষের শরীরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটিকা (cyst) তৈরি করে। এগুলির পুরু প্রাচীর থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সঙ্গে নির্গত হয়। নির্গত সিস্ট মাটিতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে এবং সংক্রমণ ছড়ায়। তাই এ রোগবিস্তারের সঙ্গে মলত্যাগের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। মল-নিকাশের সুব্যবস্থা নেই এমন স্থানে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশের গ্রামাঞ্চলে যেখানে খোলা জায়গায় লোকে মলত্যাগ করে সেখানে এ রোগ অত্যধিক। সিস্টগুলি সাধারণত কাঁচা সবজি বা সালাদ থেকে অথবা ভালভাবে সিদ্ধ নয় এমন তরিতরকারির মাধ্যমে মানুষের অন্ত্রে প্রবেশ করে। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এ আমাশয় মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সংস্পর্শে পুনঃসংক্রমণের ফলেই এমনটি ঘটে। অন্ত্রের বাইরে অ্যামিবীয় আমাশয়ের সাধারণ প্রকাশ হলো অ্যামিবীয় হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ ও জমা পূঁজ (abscess)।

অনগ্রসর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অনির্ভরযোগ্য মল-নিকাশ ব্যবস্থা এবং গ্রামাঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে সারা বছরই এ আমাশয় প্রবল বিদ্যমান। এটি দেশের একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুকালের প্রথম দিকেই রোগজীবাণু সংক্রমণ ঘটে এবং ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের তিন-চতুর্থাংশে ইতোমধ্যেই কোনো এক সময় রোগ সংক্রমণ ঘটেছে সে লক্ষণ দেখা যায়, কেননা ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের রক্তে রোগজীবাণুর অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসব উপসর্গহীন বাহক প্রায়শই অপুষ্টির কারণে পুরোপুরি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, অধিক শর্করা ও স্বল্প আমিষযুক্ত খাদ্যবস্ত্ত নির্ভরতা এ রোগের সহায়ক। বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশেই আমিষ ঘাটতিজনিত অপুষ্টি ব্যাপক। ফলে এক বিরাট সংখ্যক অপুষ্ট মানুষ অ্যামিবীয় আমাশয়ে আক্রান্ত হয়।

ব্যাসিলারি আমাশয় (Bacillary dysentery, Shigellosis) Shigella গোত্রিয় bacilli কর্তৃক অন্ত্রে সৃষ্ট উদরাময়িক অসুস্থতা যা শিগেলোসিস নামেও পরিচিত। ব্যাসিলারি আমাশয়ের সংক্রমণ ঘটে দূষিত পানি বা খাদ্যের সঙ্গে Shigella ব্যাসিলাস গলাধঃকরণের ফলে। ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা ও মলনিষ্কাশনের অব্যবস্থা এ রোগবিস্তারের সহায়ক। অন্ত্রের ভিতর Shigella ব্যাসিলাস দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কোষকলার ক্ষতিসাধনের ফলে প্রদাহ, রক্তপাত ও জ্বরের সূচনা ঘটে এবং তীব্র পেটব্যথা অনুভূত হয়। মলে নির্গত শ্লেষ্মা ও রক্ত ব্যাসিলারি আমাশয়ের প্রধান লক্ষণ। পক্ষান্তরে অ্যামিবিক আমাশয়ে সাধারণত মলে রক্ত থাকে না এবং রোগও ততটা মারাত্মক নয়।

বাংলাদেশে ব্যাসিলারি ও পরজীবী উভয় প্রকার আমাশয়ই যথার্থ আঞ্চলিক রোগ বলে গণ্য এবং ব্যাসিলারি আমাশয়ে বিশেষত শিশুদের রুগ্নতা ও মৃত্যু হার যথেষ্ট ব্যাপক। প্রত্যেক বছর কোনো একটি কেন্দ্র থেকে ব্যাসিলারি আমাশয়ের ব্যাপক আক্রমণ ও দ্রুত বিস্তার ঘটে, পক্ষান্তরে পরজীবী আমাশয় ছড়ায় অনেকটা মন্থরভাবে।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...