আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত রোগ৷ ডিসেন্ট্রি বা আমাশয় হলো এক ধরনের ডায়রিয়া যাতে পাতলা মলের সাথে রক্ত দেখা যায়৷
প্রকারভেদ -
আমাশয় দু ধরনের, এদের কারণ যেমন ভিন্ন রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসাও তেমনি ভিন্ন৷
আমাশয় দু ধরনের, এদের কারণ যেমন ভিন্ন রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসাও তেমনি ভিন্ন৷
১. এমিবিক আমাশয় : এমিবিক ঘটিত ডিসেন্ট্রি বড় ছেলে-মেয়েদের হয়ে থাকে কিন্তু ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এর প্রবণতা অত্যন্ত কম৷
২. বেসিলারি আমাশয় : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অন্ত্রের সংক্রামনের কারণে ডিসেন্ট্রি হয়৷ সাধারণত বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার কারণেই এটা হয়৷ তাদের মধ্যে সিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়াই অন্যতম৷
এমিবিক ডিসেন্ট্রি :
এই রোগটি পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রে এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক এক প্রকার পরজীবীর সংক্রামণের ফলে হয়৷ রোগটি হঠাৎ করে তীব্র আকারেও হতে পারে আবার অল্প অল্প উপসর্গসহ দীর্ঘ দিনেরও হতে পারে৷
কীভাবে সংক্রামিত হয় ?
এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা পরজীবীটি এর চারদিকে এক ধরণের আবরণ গঠন করে মাটিতে ও পানিতে বিচরণ করে৷ দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন খাবারের মাধ্যমে এই পরজীবীটি পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং বৃহদান্ত্রের সিকামের কাছাকাছি জায়গায় গিয়ে এর বাইরের আবরণটি খুলে ফেলে৷ অতঃপর পরজীবীটি বৃহদান্ত্রের গায়ে যে শ্লেষ্মাঝিল্লি আছে তা আকড়ে ধরে৷ এ সময় পরজীবীটির দেহ থেকে এক প্রকার ক্ষতিকারক রস নিঃসরণ হয় যা শ্লেষ্মাঝিল্লিকে ভেঙে ফেলে৷ আর এই ভেঙ্গে যাওয়া শ্লেষ্মাঝিল্লিতে এ্যমিবার আক্রমণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷ এই শ্লেষ্মাঝিল্লির ঝরে পড়া অংশ মলের সঙ্গে বের হয় যাকে আমরা আম বলি৷ তলপেটে সাধারণত ডানপাশে চিনচিনে ব্যথা হয়৷ ডানদিকে সিকাম থাকে যা পরজীবীটির আক্রমণের মূল লক্ষ্যস্থল৷
উপসর্গ ও লক্ষণ:
• রোগী বারবার পাতলা পায়খানা করে (সাধারণত দিনে ১০ বারের কম)৷
• পায়খানার সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আাম বেশি থাকে আর রক্ত কম৷
• ডানদিকের তলপেটে সাধারণত ব্যথা হয়৷
চিকিৎসা :
• বিশ্রাম নিতে হবে৷
• প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷
• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল (৪০০ মি.গ্রা.) ১টা দিনে ৩ বার করে ৫ দিন (পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে) খেতে হবে৷
• শিশুদের ওজন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে৷
বেসিলারি ডিসেন্ট্রি/ আমাশয়:
এ রোগটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে দেখা যায় এবং বহু লোকের মৃত্যুর জন্য এই রোগ দায়ী৷ বেসিলারি ডিসেন্ট্রি বা আমাশয়ের আর এক নাম শিগেলোসিস৷ শিগেলা নামে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের ফলে এই রোগটি হয়৷ মলের সঙ্গে রক্ত বেশি যায় বলে এটিকে এক সময় রক্ত আমাশয় বলা হতো৷
কীভাবে সংক্রমিত হয় :
২ থেকে ৫ বছরের শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়৷ এ রোগের প্রধান উৎস হলো রোগীর মল৷ মাছির মাধ্যমে রোগজীবাণু খাদ্য ও পানীয়তে সঞ্চারিত হয়৷ এ সকল দূষিত খাদ্য ও পানীয় পান করার ফলে রোগের সংক্রামণ হয়৷ শিগেলা জীবাণুটি মানুষের পেটে ঢুকে পাকস্থলী অতিক্রম করে চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে৷ সেখানে জীবাণুটি বংশবৃদ্ধি করে এবং বৃহদান্ত্রে ঘায়ের সৃষ্টি করে৷ ঝিল্লি ফুলে উঠে ও লাল হয়ে যায়৷ ঝিল্লিতে পুঁজের আবরণ পড়ে এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷ সামান্য আঘাতেই এই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়৷ তাই মলের সঙ্গে রক্ত যায়৷
• রোগী বারবার পাতলা পায়খানা করে (সাধারণত দিনে ১০ বারের কম)৷
• পায়খানার সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আাম বেশি থাকে আর রক্ত কম৷
• ডানদিকের তলপেটে সাধারণত ব্যথা হয়৷
চিকিৎসা :
• বিশ্রাম নিতে হবে৷
• প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷
• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল (৪০০ মি.গ্রা.) ১টা দিনে ৩ বার করে ৫ দিন (পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে) খেতে হবে৷
• শিশুদের ওজন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে৷
বেসিলারি ডিসেন্ট্রি/ আমাশয়:
এ রোগটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে দেখা যায় এবং বহু লোকের মৃত্যুর জন্য এই রোগ দায়ী৷ বেসিলারি ডিসেন্ট্রি বা আমাশয়ের আর এক নাম শিগেলোসিস৷ শিগেলা নামে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের ফলে এই রোগটি হয়৷ মলের সঙ্গে রক্ত বেশি যায় বলে এটিকে এক সময় রক্ত আমাশয় বলা হতো৷
কীভাবে সংক্রমিত হয় :
২ থেকে ৫ বছরের শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়৷ এ রোগের প্রধান উৎস হলো রোগীর মল৷ মাছির মাধ্যমে রোগজীবাণু খাদ্য ও পানীয়তে সঞ্চারিত হয়৷ এ সকল দূষিত খাদ্য ও পানীয় পান করার ফলে রোগের সংক্রামণ হয়৷ শিগেলা জীবাণুটি মানুষের পেটে ঢুকে পাকস্থলী অতিক্রম করে চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে৷ সেখানে জীবাণুটি বংশবৃদ্ধি করে এবং বৃহদান্ত্রে ঘায়ের সৃষ্টি করে৷ ঝিল্লি ফুলে উঠে ও লাল হয়ে যায়৷ ঝিল্লিতে পুঁজের আবরণ পড়ে এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷ সামান্য আঘাতেই এই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়৷ তাই মলের সঙ্গে রক্ত যায়৷
লক্ষণ :
• হঠাৎ করে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয় (সাধারণত দিনে ১০ বারের বেশি)৷
• রোগীর পেটে ব্যথা থাকে এবং খিঁচুনি হতে পারে৷
• রোগীর জ্বর হয় (১০২-১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে)৷
• বারবার পায়খানার ফলে পানিস্বল্পতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়৷
চিকিৎসা:
• বিশ্রাম করতে হবে৷
• প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাওয়ার স্যালাইন (সমপরিমাণ) খেতে হবে৷
• প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার (যেমন - ফুটানো ঠাণ্ডা পানি, শরবত, ডাবের পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি) খেতে হবে৷
• অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ঔষধ খেতে হবে৷
Comments
Post a Comment