Skip to main content

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য #002

কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন সম্পর্কে আমরা কমবেশি জানি। মলত্যাগ করতে কারও যদি অসুবিধা হয় অথবা বেশি সময় লাগে, তাকেই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য বলে থাকি। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে কম খাওয়া ও অপর্যাপ্ত পানি পান করায় কিছুদিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে এই অসুখটি আসলে বয়স্কদের অসুখ হিসেবেই বেশি পরিচিত।


শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, প্রতিকারই বা কী- সে সম্পর্কে ধারণা হয়তো আমাদের অনেকেরই নেই। অনেক শিশু আছে, দু-তিনদিন পায়খানা না করেও ভালো থাকে।

আবার অনেকের একদিন পায়খানা না করার কারণেই পেট ফুলে যেতে পারে। তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি ভোগে। এ শিশুর কয়েক মাস ধরে পায়খানার সমস্যা থাকে এবং বেশ কয়েক দিন পরপর পায়খানা হয়। সব সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এর কারণ বের করে চিকিৎসা করাতে হয়

কারণ

অনেক দিনের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্রনিক কনস্টিপেশনের বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেমন-

খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণ : কম আঁশযুক্ত খাবার খেলে অনেক শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। গরুর দুধ খেলেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

শারীরিক ত্রুটি

* অ্যানোরেকটাল স্টেনোসিস বা মলদ্বার জন্মগতভাবে বন্ধ থাকলে।

* স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটি।

* মানসিক প্রতিবন্ধী হলে।

* স্নায়ুর সমস্যা বা সেরেব্রাল পলসি থাকলে।

* জন্মগতভাবে পেটের সামনের মাংস না থাকলে।

* শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা হাইপোটনিয়া হলে।

* হাইপোথাইরয়েডিজম হলে।

* বহুমূত্র রোগ হলে।

* শরীরে ক্যালসিয়াম বেশি হলে।

* রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস হলে।

লক্ষণ

* পেটে ব্যথা : মাঝে মধ্যে থাকবে, আবার কিছু সময় থাকবে না।

* খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, ক্ষুধামন্দা ভাব দেখা দেবে।

* বমি হতে পারে বা বমি ভাব থাকতে পারে।

* শরীরের ওজন কম বাড়বে।

* পরীক্ষা করলে দেখা যাবে পেটটা শক্ত ও ফুলে আছে। পেটের ওপর হাত দিলে মল শক্ত অনুভূত হবে। মলদ্বার আর্দ্র থাকবে।

* স্ফিংটার খোলা থাকবে। এর ওপরই মল আটকে থাকে।

অভিভাবকের করণীয়

শিশুকে শান্তভাবে মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশু যেন ব্যথা না পায় এবং মা-বাবা যেন চিন্তামুক্ত থাকেন, অস্থিরতায় না ভোগেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রয়োজনে বাচ্চাদের মলত্যাগের জন্য পুরস্কৃত করে উৎসাহিত করতে হবে।

শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে এবং আঁশযুক্ত খাবার দিতে হবে। শক্ত পায়খানা নরম করার জন্য ওষুধ দেয়া যেতে পারে।

যদি এসবে পায়খানা না হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে সিম্পল এনেমা দিতে হবে। বাসায় গ্লিসারিন সাপোজিটরি দেয়া যেতে পারে। এক থেকে দুই চামচ মিথাইল সেলুলোজ খাওয়ার পর এ সাপোজিটরি দেয়া যেতে পারে।

মলদ্বারে ফিসার থাকলে চিকিৎসা করাতে হবে। মানসিক কোনো সমস্যা থাকলে শিশু-মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

এসব চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে শিশুর হারসপ্রং রোগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মলদ্বার থেকে বায়োপসি করলে প্যারা সিম্পেথেটিক গ্যাংলিওনিক সেল নেই। এ রোগ সাধারণত জন্মের প্রথম মাসে ৮০ শতাংশ এবং প্রথম বছরে ৯৫ শতাংশ ধরা পড়ে। এ রোগে পেট ফোলা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, খাবারে অনীহা, হলুদ বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

Comments

Popular posts from this blog

আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

আলসার বা পেটের ভিতরে হওয়া ঘা রোগীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পেটের দেওয়ালে হওয়া ঘায়ের সঙ্গে খাবারের মধ্যে থাকা মশলা , তরল ইত্যাদির সংস্পর্শ হলে বা অ্যাসিডিটি হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় , গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হয় , পেট জ্বালা করতে থাকে যা সহ্য করা একেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আলসারের মধ্যে সবচেয়ে চেনা নাম হল ' গ্যাসট্রিক আলসার ' । আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। বস্তুত , আলসার সারানোর নানা উপায় রয়েছে। আলসার সেরে যাওয়ার পর ঠিকমতো ডায়েট চার্ট মেনে চলাও সবার অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে ধূমপান না করা , মদ্যপানে বিরত থাকার কথাও চিকৎসকেরা বারবার করে বলে দেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক , কোন কোন খাবার ডায়েট চার্টে থাকলে আলসার সারতে পারে সহজেই। মধু মধু এমন একটি অ্যান্টিসেপটিক যা যে কোনও জ্বালা-পোড়া বা ঘা সারাতে লড়াই করে। মধু খেলে আলসার আর বাড়ে না। বরং ধীরে ধীরে কমবে। টক দই কম ফ্যাটের ডেয়ারি প্রোডাক্ট, বিশেষ করে দই আলসার সারাতে অসাধারণ কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও পোলট্রি  প্রোডাক্ট চর্বিহীন মাংস ও পোল...

আমাশয় এবং আইবিএস কি ? #004

শহরের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুরাদ হোসেন, বয়স পঞ্চাশ, উদ্বিগ্ন মনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। কয়েকদিন যাবৎ তার পেটটা ভাল যাচ্ছে না। এর আগেও তার পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি লক্ষ্য করেছেন- পায়খানার সাথে লাল লাল রক্ত যাচ্ছে। তাই তিনি চিন্তিত মনে তার সমস্যা নির্ণয়ের চেষ্টায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পারভিন আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বয়স চব্বিসের কাছাকাছি হবে। কয়েক মাস ধরে তার পেটে সমস্যা হচ্ছে। দিনে দু থেকে তিনবার পায়খানা হয়, প্রত্যেকবার পায়খানার আগে পেটটা মোচড় দিয়ে ব্যথা হয়, পায়খানা হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। পেটে শব্দ হয় এবং পায়খানা কিছুদিন পাতলা হয়, আবার কিছুদিন ভাল থাকে। পায়খানার সাথে আম যায়। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হওয়ায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পরামর্শের জন্য এসেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন চল্লিশ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস হল তার পায়খানা পাতলা হতে শুরু করেছে। কিছুদিন ভাল থাকে, কিছুদিন পাতলা হয়, কিছুদিন কষা হয়। পায়খানার সাথে আম যায়। পেটে খু...

ওজন কমানোর ছয় টি ভুল ধারণা

বাড়তি ওজন কমে গেলে কার না ভালো লাগে! তাই ওজন কমাতে অনেকে হয়তো উঠেপড়ে লাগেন। আর ভুলভাল রীতি মেনে চলতে থাকেন।এতে অনেকের বাড়তি মেদ   কমলেও শরীরের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। আবার চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না অনেকে। ওজণ   কমানোর কিছু ভুল ধারণার কথা   জেনে নিন। 1: কার্বোহাইড্রেট শত্রু অনেকেই ওজণ কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন বা ভাবেন Weight কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিতেই হবে। সত্য হলো , শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে গেলে বা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস যেমন : ফল , সবজি , বাদাম , গম জাতীয় খাবার এগুলো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।   ওজন   কমাতে প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন : সাদা ভাত , সাদা পাস্তা , প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক , মিষ্টি ইত্যাদি। এগুলো কম খাওয়াই ভালো। 2: দ্রুত ফলাফল পেতে জিমে গিয়ে কঠোর ব্যায়াম করা প্রতিদিন সমপর...